শরীরের টেস্টোস্টেরন হরমোন কিভাবে বাড়ানো সম্ভব।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেহে টেস্টোস্টেরন হরমোন স্বাভাবিকভাবেই কমতে থাকে।
৩০–৩৫ বছর পর থেকেই ধীরে ধীরে পতন শুরু হয়, আর ৫০-এর পর অনেকে Low T syndrome বা andropause-এর সমস্যায় ভোগেন। তবে জীবনধারায় কিছু সচেতনতা আনলে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা দীর্ঘদিন স্থিতিশীল রাখা যায়।
১. সুষম খাদ্যাভ্যাস:
প্রোটিন ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাট (ডিম, মাছ, বাদাম, অলিভ অয়েল) হরমোন উৎপাদনে সহায়ক।
দস্তা (Zinc) ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার (ডিমের কুসুম, দুধ, লাল মাংস, কুমড়ার বীজ, সূর্যালোক) টেস্টোস্টেরন বজায় রাখে।
এছাড়া টেস্টোস্টেরন প্রাকৃতিকভাবে বাড়ানোর জন্য কিছু খাবার আছে যেগুলো বৈজ্ঞানিকভাবে টেস্টোস্টেরন বৃদ্ধিতে সহায়ক বলে প্রমাণিত।
🥩 প্রোটিন ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাটসমৃদ্ধ খাবার-
ডিমের কুসুম – ভিটামিন D, কোলেস্টেরল ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাট থাকে, যা টেস্টোস্টেরন তৈরিতে লাগে।
চর্বিহীন মাংস (গরু, মুরগি, খাসি) – উচ্চ প্রোটিন ও জিঙ্ক সমৃদ্ধ।
মাছ (স্যালমন, টুনা, সার্ডিন, ইলিশ) – ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে।
🥜 বাদাম ও বীজজাতীয় খাবার-
আলমন্ড, আখরোট, কাজু – স্বাস্থ্যকর ফ্যাট ও জিঙ্ক সরবরাহ করে।
কুমড়ার বীজ, সূর্যমুখীর বীজ – জিঙ্ক, ম্যাগনেসিয়াম ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর।
🥦 শাকসবজি ও ফল-
ব্রকোলি, পালং শাক, কেল – ম্যাগনেসিয়াম ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে।
ডালিম (আনার) – রক্তসঞ্চালন বাড়ায়, টেস্টোস্টেরন বৃদ্ধিতে সহায়ক।
কলা – ব্রোমেলিন এনজাইম থাকে যা টেস্টোস্টেরন উৎপাদনে ভূমিকা রাখে।
🥛 দুগ্ধজাতীয় খাবার:
দুধ (বিশেষ করে ফোর্টিফায়েড দুধ) – ভিটামিন D ও ক্যালসিয়াম দেয়।
গ্রিক ইয়োগার্ট – প্রোটিন ও প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ।
🌿 ভেষজ ও মসলা
আদা – গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত আদা খেলে টেস্টোস্টেরন বাড়তে পারে।
রসুন – টেস্টোস্টেরন উৎপাদনে সহায়ক এনজাইম সক্রিয় করে।
নোট:
যেগুলো এড়িয়ে চলা উচিত-
অতিরিক্ত চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার
অতিরিক্ত অ্যালকোহল।
ট্রান্স ফ্যাটসমৃদ্ধ খাবার (ফাস্টফুড, ভাজাভুজি) শুধু খাবার নয়, পর্যাপ্ত ঘুম, নিয়মিত ব্যায়াম (বিশেষ করে ওয়েট লিফটিং/স্ট্রেংথ ট্রেনিং) আর মানসিক চাপ কমানো—এসবও টেস্টোস্টেরন বাড়াতে বড় ভূমিকা রাখে।
অতিরিক্ত চিনি, ভাজা-চর্বিযুক্ত ফাস্টফুড ও প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলা দরকার, কারণ এগুলো ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বাড়ায় এবং টেস্টোস্টেরন কমায়।
২. নিয়মিত ব্যায়াম:
ওজন তোলা (strength training) টেস্টোস্টেরন বৃদ্ধিতে সবচেয়ে কার্যকর।
HIIT (High Intensity Interval Training) তুলনামূলকভাবে বেশি প্রভাব ফেলে।
নিয়মিত হাঁটা বা যোগব্যায়াম রক্তসঞ্চালন ও মানসিক চাপ কমায়, যা হরমোন ভারসাম্য রক্ষা করে।
৩. পর্যাপ্ত ঘুম:
প্রতিদিন ৭–৮ ঘণ্টা গুণগত ঘুম না হলে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা দ্রুত কমে যায়।
গভীর ঘুমে (deep sleep) শরীরে সবচেয়ে বেশি টেস্টোস্টেরন নিঃসৃত হয়।
৪. মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ:
দীর্ঘস্থায়ী স্ট্রেস কর্টিসল হরমোন বাড়ায়, যা সরাসরি টেস্টোস্টেরন কমিয়ে দেয়।
ধ্যান, প্রার্থনা, শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম, অবসর সময় কাটানো স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে।
৫. ওজন নিয়ন্ত্রণ:
অতিরিক্ত মেদ (বিশেষ করে কোমরের চারপাশে) টেস্টোস্টেরন হ্রাস করে।
স্থূল পুরুষদের শরীরে টেস্টোস্টেরন থেকে বেশি ইস্ট্রোজেন তৈরি হয়।
৬. মদ ও ধূমপান এড়িয়ে চলা:
অতিরিক্ত অ্যালকোহল ও নিকোটিন টেস্টোস্টেরন হ্রাস করে। দীর্ঘদিন ধূমপান করলে টেস্টিসের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
৭. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা:
হরমোন লেভেল, ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল, থাইরয়েড ইত্যাদি চেকআপ জরুরি।
কোনো অসুখ থাকলে তা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অবহেলা করা উচিত নয়।
উপসংহার:
পঞ্চাশোর্ধ বয়স মানেই টেস্টোস্টেরন কমে যাবে—এটা অবশ্যম্ভাবী নয়।
শরীরচর্চা, সুষম খাদ্য, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ ও সঠিক জীবনযাপন মেনে চললে টেস্টোস্টেরন দীর্ঘদিন স্থিতিশীল থাকে, আর জীবনযাত্রার মানও ভালো থাকে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন