ব্যায়াম ছাড়াই সুখের হরমোন বাড়ানোর উপায়।

মস্তিষ্ক যখন আনন্দ বা উচ্ছ্বাস অনুভব করে, তখন শরীরে নিঃসৃত হয় এক বিশেষ ধরনের রাসায়নিক— এন্ডরফিনস। একে ‘ভালো বোধের’ বা সুখের হরমোনও বলা হয়।



এই হরমোন মন ভালো রাখে, চাপ কমায়, এমনকি শরীরের ব্যথাও লাঘব করে।


সাধারণত ব্যায়ামকে এন্ডরফিনস বাড়ানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায় বলা হয়। তবে শুধু ব্যায়াম নয়, আরও কিছু সহজ কাজ আছে যা করলে শরীরে প্রাকৃতিকভাবে এন্ডরফিনস বেড়ে যায়।


যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার মনোবিজ্ঞানী এরিকা রোজমিড রিয়েলসিম্পল ডটকম-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেন, “ব্যায়াম এক ধরনের কার্যকর উপায় হলেও মস্তিষ্কে সুখ হরমোন বাড়ানোর আরও নানান প্রাকৃতিক কৌশল আছে, যা মানসিক চাপ কমিয়ে মনকে প্রফুল্ল করতে পারে।”


ঠাণ্ডা পানিতে ডুব দেওয়া বা শীতল পানির ঝাপটা শরীর হঠাৎ ঠাণ্ডা পানিতে ডুব দিলে প্রথমে এক ধরনের অস্বস্তি তৈরি হয়। তবে কয়েক মিনিট পর শরীর মানিয়ে নিতে শুরু করলে মস্তিষ্ক থেকে প্রচুর এন্ডরফিনস নিঃসৃত হয়। ফলে মন ভালো হয়ে যায়, মনোযোগ বাড়ে এবং মানসিক চাপ কমে।


ডা. রোজমিড বলেন, “তিন মিনিটের জন্য ঠাণ্ডা পানিতে থাকা বা গোসলের সময় কয়েক সেকেন্ড ঠাণ্ডা পানির ঝাপটা নেওয়া স্নায়ুতন্ত্রকে সক্রিয় করে এবং শরীর পরে সেই চাপ কাটাতে গিয়ে প্রচুর এন্ডরফিনস ছাড়ে।”


যাদের স্পাতে যাওয়ার সুযোগ নেই, তারা ঘরে বসেই এই উপায় প্রয়োগ করতে পারেন।

গান গাওয়া বা গুনগুন করা-

গান গাওয়া কিংবা শুধু গুনগুন করারও বৈজ্ঞানিক সুফল আছে। আমাদের কণ্ঠস্বর ব্যবহারের ফলে শরীরে স্নায়ুর সঙ্গে যুক্ত ‘ভেগাস নার্ভ’ উদ্দীপ্ত হয়। এর প্রভাবে শরীরে শান্তি নেমে আসে, মানসিক চাপ কমে এবং সুখ হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়।

মার্কিন মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শদাতা কোর্টনি শ্রাম বলেন, “নিজের কণ্ঠ ব্যবহার করলে স্নায়ুতন্ত্রে একটি ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়, যা শরীরে ভালো লাগার রাসায়নিক পদার্থ বাড়ায়।”

বাড়িতে বসে কিংবা হাঁটার সময় নিজের পছন্দের গান গাওয়া বা গুনগুন করাই যথেষ্ট।

ইন্দ্রিয়কে খুশি করার মতো কাজ করা-

প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখা, সূর্যোদয় বা সূর্যাস্ত উপভোগ করা, পাখির ডাক শোনা বা খোলা বাতাসে হাঁটা— এসব কাজ পাঁচটি ইন্দ্রিয়কে সক্রিয় করে। ফলে শরীরে আনন্দের অনুভূতি বাড়ে এবং মস্তিষ্ক থেকে এন্ডরফিনস নিঃসৃত হয়।

ডা. রোজমিড বলেন, “যখন আমাদের ইন্দ্রিয় দিয়ে প্রকৃতি বা আশপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করি, তখন এক ধরনের বিস্ময়বোধ তৈরি হয়। এই অনুভূতি শরীরে সুখ হরমোন বাড়ায়।”

অর্থাৎ, খুব ব্যস্ত জীবনেও একটু সময় বের করে চারপাশকে মন দিয়ে দেখাই হতে পারে মন ভালো রাখার বড় উপায়।


ডার্ক চকলেট খাওয়া-

মিষ্টির মধ্যে চকলেট শুধু স্বাদেই ভালো নয়, শরীরের জন্যও উপকারী। বিশেষ করে ডার্ক চকলেট। এতে থাকা কোকো শরীরে এন্ডরফিনস বাড়ায় এবং মস্তিষ্কে সেরোটোনিনের মাত্রা উন্নত করে। ফলে মন শান্ত হয় এবং এক ধরনের প্রশান্তি অনুভূত হয়।

কোর্টনি শ্রাম বলেন, “খাবারের মধ্যে কোকো এমন একটি উপাদান, যা সরাসরি সুখ হরমোন বাড়ায়। প্রতিদিন অল্প পরিমাণে ডার্ক চকলেট খেলে মন ভালো থাকে।”

তবে এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল পরিমাণে নিয়ন্ত্রণ রাখা। বেশি খেলে তা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।


অন্যকে সাহায্য করা বা ছোট ছোট দয়ার কাজ-

অন্যকে সাহায্য করলে যে নিজের মন ভালো হয়, তা প্রায়ই অনুভব করা যায়। এটি শুধু মানসিক তৃপ্তিই দেয় না, বরং বৈজ্ঞানিকভাবেও প্রমাণিত যে- দয়ার কাজ মস্তিষ্কের ‘রিওয়ার্ড সেন্টার’ বা পুরস্কারের কেন্দ্র সক্রিয় করে। ফলে এন্ডরফিনস নিঃসৃত হয় এবং মন আনন্দে ভরে ওঠে।


কোর্টনি শ্রাম বলেন, “ছোট কোনো কাজ, যেমন- কারও জন্য দরজা খুলে ধরা, প্রতিবেশীর বাজার করে দেওয়া কিংবা বন্ধুর খোঁজ নেওয়া— এসব কাজ আমাদের শরীরে সুখ হরমোন বাড়ায়।”


অতএব, অন্যকে সাহায্য করলে যেমন তাদের উপকার হয়, তেমনি নিজের মনও প্রফুল্ল হয়।

যে অভ্যাসগুলো এন্ডরফিনস উৎপাদন কমিয়ে দেয় কিছু কাজ যেমন এন্ডরফিনস বাড়ায়, তেমনি কিছু অভ্যাসে কমেও যেতে পারে।


কোর্টনি শ্রাম বলেন, “দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ, ঘুমের অভাব এবং অতিরিক্ত মোবাইল স্ক্রল করা বা একই সঙ্গে অনেক কাজ করার অভ্যাস স্নায়ুতন্ত্রকে সবসময় সতর্ক রাখে। এর ফলে শরীরে কর্টিসল নামক চাপ হরমোন বেড়ে যায়, আর এন্ডরফিনস কমে যায়।"


ডা. রোজমিড যোগ করেছেন, "অতিরিক্ত মদ্যপানও এন্ডরফিনস কমিয়ে দেয়। যদিও সাময়িকভাবে মনে হতে পারে এটি আনন্দ দিচ্ছে, তবে দীর্ঘমেয়াদে উল্টো বিষণ্নতা তৈরি করে।"

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

চরিত্রহীন নারী চেনার ৮ উপায়।

Nagad88 অফিসিয়াল অনলাইন ক্যাসিনো বাংলাদেশ

৩ ধরনের নারীরা নিজের স্বামীতে কোনদিন সন্তুষ্ট হয়না।